
গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, যার ফলে অনেকেই পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভোগেন। তাই এই সময় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন ফল ও পানীয় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি, যেগুলো শরীরে পর্যাপ্ত পানি, ইলেক্ট্রোলাইট ও পুষ্টি সরবরাহ করে। নিচে তেমন কিছু ফল ও প্রাকৃতিক পানীয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো গরমে দেহকে সতেজ রাখে, তৃষ্ণা মেটায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
১. তরমুজ
তরমুজ গ্রীষ্মের অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এতে প্রায় ৯২% পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও লাইকোপিন, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং তাপঘাত থেকে রক্ষা করে। তরমুজে থাকা প্রাকৃতিক চিনি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়।
২. আনারস
আনারসে রয়েছে প্রায় ৮৬% পানি এবং ভিটামিন সি। এটি শুধু পানিশূন্যতা দূর করেই না, বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সহায়তা করে। আনারসে থাকা ব্রোমেলিন নামক এনজাইম প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং গরমের ক্লান্তি দূর করে।
৩. ডাবের পানি
ডাবের পানি হলো প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইটে ভরপুর এক অনন্য পানীয়। এতে আছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পানির অভাব পূরণ করে। এটি কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করতেও সহায়তা করে, তবে কিডনি রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
৪. বেলের শরবত
বেলে রয়েছে ভিটামিন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি হজমে সাহায্য করে এবং পেটের নানা সমস্যা যেমন অ্যাসিডিটি বা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই দেয়। নিয়মিত বেলের শরবত পান করলে গ্রীষ্মের গরমে আরাম পাওয়া যায়।
৫. শসা
শসা একটি এমন সবজি যা প্রায় ৯৬% পানি দিয়ে তৈরি। এটি গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং হজমে সহায়তা করতে পারে। সালাদে বা সরাসরি খেলে এটি সহজেই শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৬. লিচু
লিচুতে প্রাকৃতিক চিনির পাশাপাশি প্রচুর পানি, ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং শরীরে শীতলতা আনে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি বেশি।
৭. কমলা ও মাল্টা
এই ফলগুলোতে ৮৫-৮৮% এর বেশি পানি থাকে। এগুলোতে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরকে চাঙ্গা রাখে এবং গরমে ক্লান্তি কমায়। রস করে বা সরাসরি খাওয়া যেতে পারে।
⸻
উপসংহার:
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি ও পানি-সমৃদ্ধ ফল খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। উপরোক্ত ফল ও পানীয়গুলো কেবল পানিশূন্যতা দূর করে না, বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং তাপজনিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে।