
ইতিহাস মানুষকে ভাবতে শেখায়, আর সেই ভাবনার পথ ধরেই আমরা সামনে এগোই। এই পথের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তার জন্ম ১৮৫৬ সালের ৬ মে, অস্ট্রিয়ার মোরাভিয়ায়। ফ্রয়েড ছিলেন একজন বিশ্বখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক।
তুমি নিশ্চয়ই শুনেছো ‘মনোসমীক্ষণ’ বা ‘Psychoanalysis’ সম্পর্কে—এই চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবক ছিলেন ফ্রয়েড। তাকে ‘মনোবীক্ষণের জনক’ও বলা হয়। তার তত্ত্ব ও চিন্তাধারা এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, সেটা নিয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য বই, সিনেমা আর গবেষণা।
তোমার জানতে ভালো লাগবে, ‘কেস অফ আনা’ নামে এক ঘটনা ছিল ফ্রয়েডের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। আনা নামের এক রোগী হিস্ট্রিয়ায় ভুগছিল, আর তার চিকিৎসক জোসেফ ব্রোয়ার তাকে সারিয়ে তুলেছিলেন পুরনো ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে। এই পদ্ধতিতে ব্রোয়ার আরও কয়েকজন রোগীকে ভালো করেন এবং বন্ধু ফ্রয়েডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এই আলোচনা থেকেই ফ্রয়েড অনুপ্রাণিত হন।
১৮৯৫ সালে দুজনে মিলে লেখেন ‘স্টাডিজ ইন হিস্ট্রিয়া’ বইটি, যা মনোচিকিৎসার এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
ফ্রয়েড প্রথম বলেন, আমাদের মন আসলে দুই ভাগে বিভক্ত—সচেতন আর অবচেতন। তিনি বলেন, মনকে যদি বরফখণ্ড হিসেবে ভাবি, তবে সচেতন অংশ শুধু উপরের ছোট্ট অংশ আর অবচেতন মন নিচের বিশাল ডুবে থাকা অংশ। আমাদের বেশিরভাগ মানসিক কাজকর্ম চলে এই অবচেতন স্তরে।
তিনি ‘ইড’, ‘ইগো’ আর ‘সুপার ইগো’র মতো ধারণা দিয়েছেন, যেগুলো এখন মনোবিজ্ঞানের মূল ভিত্তিগুলোর একটি। এছাড়াও ‘ইডিপাস কমপ্লেক্স’, ‘ফ্রয়েডীয় স্খলন’, ‘আত্মরক্ষা পদ্ধতি’, ‘স্বপ্নের ব্যাখ্যা’—এই সব বিষয়ে তার ব্যাখ্যা মানুষকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
তবে আজকের অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, ফ্রয়েডের কিছু তত্ত্ব ছিল তার ব্যক্তিগত চিন্তার প্রতিফলন, তাই সেগুলোকে পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক বলা যায় না।
তবুও, তার অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তার লেখা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই হলো: ‘স্বপ্নের প্রতীকী ব্যাখ্যা’, ‘যৌনতার তত্ত্বের তিন পাঠ’, ‘টোটেম ও টাবু’, ‘মোজেস ও একেশ্বরবাদ’।
১৯৩৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ফ্রয়েড স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন এবং ইহজগতের মায়া কাটান। কিন্তু তার মনোসমীক্ষণ তত্ত্ব আজও মানুষের মন বোঝার এক গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।