নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তে নারী চিকিৎসক ও প্যারামেডিক বাধ্যতামূলক করার দাবি গৃহীত

নারীর মরদেহের ময়নাতদন্তে নারী চিকিৎসক ও প্যারামেডিকের অংশগ্রহণে নীতিমালা চেয়ে হাইকোর্টের রুল

 

নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত নারী চিকিৎসক ও নারী প্যারামেডিকেল স্টাফ দ্বারা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্বের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।

 

২০২৫ সালের ২০ এপ্রিল, রবিবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং শিক্ষা শাখার মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

 

এই রুলের পেছনে রয়েছে একটি জনস্বার্থে রিট, যা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ ২০২৫ সালের মার্চ মাসে দাখিল করেন। রিটে তিনি বলেন, নারীর মরদেহের ময়নাতদন্তে পুরুষ চিকিৎসকের অংশগ্রহণ নারীর মর্যাদা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পরিপন্থী। এটি মৃত ব্যক্তির অধিকার ও সংবিধানিক সুরক্ষার বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাই, এই প্রক্রিয়ায় নারী চিকিৎসক ও নারী সহকারী কর্মীদের সম্পৃক্ত করার জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।

 

রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কাজী আখতার হামিদ এবং তার সঙ্গে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী জুয়েল আজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী।

 

আইনজীবী জুয়েল আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানে নারীর ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে নারী চিকিৎসক ও কর্মীদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একইভাবে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন রায়ে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

 

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিকের জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে, যা জীবদ্দশায় যেমন প্রযোজ্য, মৃত্যুর পরেও মর্যাদার সাথে আচরণের ক্ষেত্রে তা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। নারীর মরদেহ নিয়ে চিকিৎসা ও পরীক্ষার সময় যথাযথ সম্মান ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করাই এই রিটের মূল উদ্দেশ্য।

 

আদালতের এই রুল নারীর মর্যাদা রক্ষা ও সংবেদনশীল চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদি সরকার এই রুলের পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালা প্রণয়ন করে, তাহলে তা ভবিষ্যতে নারীর মরদেহের ব্যবস্থাপনায় একটি বড় পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।