জুলাই আন্দোলনে কারা লড়লেন, আর কারা এখন শুধু কৃতিত্ব নিচ্ছেন? এনসিপির ইতিহাস বিকৃতি শুরু?
২০২৪ সালের জুলাই মাসের জনবিদ্রোহে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি একযোগে মাঠে নামে। কিন্তু আজ, সেই আন্দোলনের মূল্যায়নে শুধুমাত্র এনসিপি (জাতীয় নাগরিক প্ল্যাটফর্ম) নিজেদের প্রচার করছে, অন্যদের অবদান উপেক্ষা করে — যা ইতিহাস বিকৃতির শামিল বলে মনে করছেন অনেকেই।
কারা ছিলেন আন্দোলনের অগ্রভাগে?
- গণঅধিকার পরিষদ – নুরুল হক নূর: আন্দোলনের এক পর্যায়ে নূর কারাগারে যান, যা আন্দোলনের গতি ও আবেগকে আরও তীব্র করে তোলে। তিনিই প্রথম “একদফা – সরকারের পদত্যাগ” দাবিতে স্পষ্ট ঘোষণা দেন, যা আন্দোলনের চরিত্র বদলে দেয়। কিন্তু আজ সেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ভুলে গিয়ে অনেকেই কেবল এনসিপিকে সামনে আনছে।
- বাম গণতান্ত্রিক জোট – সাইফুল হক, বজলুর রশীদ ফিরোজ: বামপন্থীরা ঢাকার বাইরেও বড়সড় মিছিল করেছে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেও তারা সমাবেশ চালিয়ে গেছেন।
- বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন – রাশেদ খান: চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ একাধিক জেলায় সক্রিয় ছিলেন। জ্বালানি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
- ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশন – লিখন দাশ, মারুফ: বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলোয় প্রতিরোধ গড়ে তোলে এরা। রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে টিএসসি পর্যন্ত একাধিক জায়গায় সমাবেশ করেন।
- মাদ্রাসার ছাত্ররা ছিলো অগ্রভাগে
- জেএসডি – আ স ম আবদুর রব: সংবিধান ও নাগরিক অধিকার নিয়ে ধারাবাহিক বিবৃতি ও জোটীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন।
- সুশীল সমাজ – ড. জাফর ইকবাল, মহিউদ্দিন আহমেদ: নাগরিক অধিকার, মুক্ত চিন্তা ও বাক-স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছিলেন এবং ছাত্রদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন।
- হুজুরদের সবাই ছিলো ছাত্রদের পক্ষ্যে
শুধু এনসিপি এগিয়ে? বাকি সবাই উপেক্ষিত!
এখন দেখা যাচ্ছে, এনসিপি তাদের একাংশের নেতাকর্মীদের কেবল সামনে রেখে আন্দোলনের 'ব্র্যান্ডিং' করছে। অথচ, নূরুল হক নূরের মতো ব্যক্তিত্ব, যিনি জেল পর্যন্ত গেছেন এবং একদফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন — তাকেও আজ পাশ কাটানো হচ্ছে।
“নূর জেল খেটেছে, তার মুখ থেকেই প্রথম একদফা আন্দোলনের ডাক এসেছিল। অথচ আজ ইতিহাসে কৃতিত্ব দিচ্ছে এমন মানুষদের, যারা নিরাপদ দূরত্বে বসে বিবৃতি দিয়েছে।”
– একজন সাবেক ছাত্রনেতা
সরকারের ভূমিকা ও প্রশ্ন
সরকারও এনসিপির এই একপাক্ষিক প্রচারে যেন মৌন সমর্থন দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি কৌশল হতে পারে—একটি ‘সহনশীল বিরোধী’ শক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে বাকিদের দুর্বল করা।
ইতিহাস ভুলে গেলে ভবিষ্যত বিপজ্জনক
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপি যদি এই পথেই এগোয়, তবে তারা একদিন ক্ষমতায় এসে একতরফা ইতিহাস লিখবে। যেমনটা আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে করেছিল। সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সব পক্ষের স্বীকৃতি।