স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের ‘অকালীন উত্তরণে লাভবান হবে ভারত’

বাংলাদেশের এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণ নিয়ে উদ্বেগ অর্থনীতিবিদ মুশতাক খানের

 

অর্থনীতিবিদ মুশতাক খান মনে করেন, জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। তার মতে, এই তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে দেশটি বেশ কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা হারাবে। যেমন—বাণিজ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা কমে যাবে, বিদেশি ঋণের সুদের হার বাড়বে এবং দেশের শিল্প খাত চরম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে, যার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো—বিশেষ করে ভারত—চায় বাংলাদেশ এলডিসি তালিকা থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাক, যাতে তারা বেশি সুবিধা পায়। যদি বাংলাদেশ জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতিমালাবিষয়ক কমিটির (CDP) কাছে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করে, তবে এসব প্রতিযোগী দেশ বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

 

এই বক্তব্য তিনি দিয়েছেন রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ: প্রস্তুতি ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে। চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ নামের একটি সংস্থা এ আয়োজন করে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং সরকারি কর্মকর্তারা।

 

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণা প্রধান ইশতিয়াক বারী জানান, বাংলাদেশ উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি শর্তই পূরণ করেছে এবং ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে এলডিসি তালিকা থেকে দেশের বেরিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে কিছু বাণিজ্যিক সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত এবং ওষুধ খাতে মেধাস্বত্ব ছাড় ২০৩৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

 

তিনি বলেন, কোনো দেশ নিজের ইচ্ছায় উত্তরণ পিছিয়ে দিতে পারে না। এ জন্য জাতিসংঘের অনুমোদন প্রয়োজন, এবং যথাযথ যুক্তি দেখাতে হয়।

 

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার চিন্তা করলেও পরে তা থেকে সরে আসে এবং ২০২৫ সালের মধ্যেই উত্তরণ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

 

মুশতাক খান বলেন, এলডিসি সুবিধা হারালে দেশের অনেক শিল্প খাত, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ওষুধ শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। তার মতে, এই খাতগুলো এখনো সেই প্রস্তুতিতে নেই।

 

পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কনীতি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইউরোপের বাজারে রপ্তানি একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুল্ক আরোপ হয়, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।